৪২২তম সাপ্তাহিক লেকচার
বিষয় : কোভিড—১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার করোনার প্রধান অভিঘাত শ্রমবাজারে, সমাধান কর্মমুখী শিক্ষা ও অর্থনীতির বহুমুখীকরণ
রিডিং ক্লাবের লেকচারে ড. সায়মা হক বিদিশা
স্বাস্থ্যখাতের বাইরে করোনা মহামারির সবচয়ে ভয়াবহ অভিঘাত পড়েছে শ্রমবাজারে মাধ্যমে। মজুরিভিত্তিক শ্রমে জড়িত ব্যক্তিদের অধিকাংশের আয় কমেছে, কারো চাকরি চলে গেছে কিংবা কেউ পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে ফিরে এসেছেন, নতুন করে যাওয়ার পরিকল্পনা যারা করছিরেন, তারা আর যেতে চাইছেন না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা গুটাতে হয়েছে। তরুণদের বেকারত্ব আরো বেড়েছে। মহামারির আগেই এই সমস্যার অনেকগুলো চোখ রাঙানি দিচ্ছিল। এখন তা নগ্নভাবে সামনে এসেছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার উপর জোর দিতে হবেÑবিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্ট মানবসম্পদ ও বাজারের চাহিদার মধ্যে ফারাক দূর করার জন্য এখনই এই উদ্যোগ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন ধরণের কাজের, কারিগরি শ্রমের প্রতি নেতিবাচক ধারণা দূর করতে হবে। কারিগরি প্রশিক্ষণব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করতে হবে। আনুষ্ঠানিক—অনানুষ্ঠানিক খাতের বিভাজন দূর করার জন্য উদ্যোগ, ন্যূনতম মজুরি, ভয়াবহ বৈষম্য দূর করতে হবে। নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জ দূর করতে হবেÑনিরাপত্তার অভাব। অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষকে আনুষ্ঠানিক খাতে নিয়ে আসার জন্য বিশেষ প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিনিয়োগ—প্রণোদনা বাড়াতে হবে। শিক্ষা ও বাজারের ফারাক দূর করার জন্য কর্মমুখী শিক্ষা, এক দুদিনে কমানো যাবে না, ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা নিজেদের বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কর্মসংস্থানের জন্য কেবল গার্মেন্টস খাতের নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতির বহুমুখীকীকরণের উপর জোর দিতে হবে।
‘কোভিড—১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার’ শীর্ষক রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট আয়োজিত ৪২২তম সাপ্তাহিক লেকচারে এসব মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেম—এর গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় জুম ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে বক্তৃতাটি অনুষ্ঠিত হয়।
মূল বক্তৃতায় ড. সায়মা হক বিদিশা আরো বলেন যে, পরিবার দারিদ্রসীমার নীচে চলে গেলে পরিবারের সদস্যদের আলাদা আলাদা সমস্যা তৈরি হয়। তরুণরা টিউশনি করতে পারতো, তাদের সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। খানার সদস্যদের মধ্যে পুষ্টিগ্রহণের ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হয়, শিশুদের জন এটা বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। স্কুল—কলেজ থেকে অনেকে ঝরে পড়তে পারেÑএই আশঙ্কা ইউনিসেফ—সহ অনেক সংস্থা প্রকাশ করছে। নিম্নআয়ের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা ব্যাহত হবে। পরিবারে দু’জন কিশোর—কিশোরী থাকলে, কিশোরীর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমাদের মত গ্রামকেন্দ্রিক অর্থনীতি, বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণদের দক্ষতা অর্জনের (স্কিল ফর্মেশন) ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়Ñকেউ বাইরে যেতে চেয়েছিল, বাধ্য হয়ে চাকরিতে ঢুকে যাচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়তে পারে। করোনার কারণে বাজারব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। ফলে, প্রথাগত অনেক দক্ষতা নিয়ে বাজারে কাজ পাওয়া যাবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের যেন চাকরি হারাতে না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এসব সমস্যার সমাধান অসম্ভব কিছু না। কিছু ক্ষেত্রে অর্থ গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যবস্থাপনা। সবকিছু নির্ভর করছে প্রথমত কতটা দক্ষতার সাথে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সরকার এই পরিস্থিতিতে কী দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নিচ্ছে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত সমাজ—গবেষক ড. গোলাম মুরশিদ, দৈনিক প্রথম আলোর সহকারি সম্পাদক প্রতীক বর্ধন প্রমুখ।