বাংলা চলচ্চিত্রে বাউল ও ফকির পরিবেশনার রাজনীতি
জানুয়ারি ৮, ২০২৩

৪৮৫তম সাপ্তাহিক পাবলিক লেকচার

বিষয়: বাংলা চলচ্চিত্রে বাউল ও ফকির পরিবেশনার রাজনীতি

বক্তা: আ-আল মামুন

তারিখ: ৭ জানুয়ারি, ২০২৩

লালন নিজেকে বাউল মনে করতেন না। গানের রচয়িতা হিসেবে স্বতঃসিদ্ধভাবে ব্যবহৃত লালন নামটির সাথে ফকির ও ফকিরি প্রত্যয় দুটি পাওয়া গেলেও বাউল প্রত্যয়টি কখনোই পাওয়া যায় না। কিন্তু জন্মবৃত্তান্ত, যৌনতাকে বাঙালির সাংস্কৃতিক আবশ্যিক অঙ্গ হিসেবে হাজির করে বর্তমানে লালনকে বাউল হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলা সিনেমায় এই প্রবণতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সিমেনায় লালনের বাউল ও ফকির নির্মাণের সাংস্কৃতিক রাজনীতি বাঙালি নামের আধুনিক জাতিবাদী ভাবকল্পের সীমারেখা নির্ধারণ করে। যেখানে বাঙালিকে দেখা যায় মানবতাবাদী, সেক্যুলার হিসেবে।

২০১০ সালে পশ্চিম বাংলার চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ নির্মাণ করেন ’মনের মানুষ’। সিনেমাটি তৈরি হয়েছে কবি ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ’মনের মানুষ’ উপন্যাস অবলম্বনে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রেক্ষাপট এবং বিশ্বজুড়ে ধর্মীয়, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লালনের মনোভাব পরিচালক গৌতম ঘোষকে এই ছবি বানাতে আগ্রহী করে তোলে। কিন্তু সিনেমায় লালনের প্রকৃত ইমেজের অনুপস্থিতি চোখে পড়ে। মুসলিম ধারার সুফি দরবেশের অনুকরণে নয়, বরং লালনকে নির্মাণ করা হয়েছে হিন্দু ঋষির অনুকরণে। ২০১৫ সালে অমিতাভ চক্রবর্তী নির্মাণ করেন ’কসমিক সেক্স’। এই সিনেমায় বাউল ফকিরদের জীবনকথা, সাধন-ভজনকে উপস্থাপন করা হয়েছে যৌন বাসনার নিরিখে। অর্থাৎ, ফকিরি সাধনাকে কেবল যৌন সাধনায় সীমিত করা হয়েছে।

সামাজিক, সাংস্কৃতিক কিংবা নিম্নবর্গীয় রাজনীতিতে লালন ফকিরের ভূমিকা আলোচ্য সিনেমা দুটিতে উহ্য থেকেছে। তার পরিবর্তে এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে অত্যন্ত সচেতনভাবে লালনের বাউল অভিধাকে দৃশ্যমান এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

cross-circle